পাবনার সাঁথিয়ার বনগ্রামে গ্রাহকদের ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার হেমায়েত করিমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) তাকে কারাগারে পাঠানো হলেও বিষয়টি রোববার (১৯ অক্টোবর) প্রকাশ্যে আসে।
সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার (১৯ অক্টোবর) ব্যাংক খোলার পর গ্রাহকরা ভিড় করেন। তারা নিজেদের হিসাবের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন, অনেকের টাকা নেই।
জানা যায়, গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) বনগ্রামের ব্যবসায়ী উপজেলার সাগরদারী গ্রামের সালাম ব্যাপারী জনতা ব্যাংক বনগ্রাম বাজার শাখায় টাকা তুলতে যান। তার হিসাবে টাকা নেই বলে ব্যাংকের হিসাবরক্ষক জানান। এ ঘটনায় সালামের চিৎকারে আশপাশের ব্যবসায়ী গ্রাহকরা ব্যাংকে জড়ো হয়ে তাদের হিসাব নম্বর চেক করেন। পরে দেখা যায় প্রায়, গ্রাহকেরই জমা রাখা টাকা কম। বিষয়টি জেলা অফিসকে জানালে তারা এসে ঘটনার সত্যতা পায়। এ নিয়ে রাতভর যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়।
গত ১৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ব্যাংকে নতুন ম্যানেজার ফরিদুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই দিনই ফরিদুজ্জামান বাদী হয়ে আতাইকুলা থানায় আগের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর হোসের জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ১৫৪ ধারায় মামলা রুজু করে বৃহস্পতিবার অভিযুক্তকে পাবনা আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
বনগ্রাম বাজার জনতা ব্যাংকের শাখা ম্যানাজার আটকের ঘটনার সংবাদ জানাজানি হলে গ্রাহকদের রোববার সকাল থেকে ব্যাংকে ভিড় দেখা গেছে। সবাই তাদের নিজের হিসাবে রাখা টাকার খোঁজ করছেন।
বনগ্রামের ব্যবসায়ী তনয় ভ্যারাইটিস দোকানের মালিক তনয় সাহা জানান, তার সিসি লোনের ৪৯ লাখ টাকা হিসাব থেকে উধাও হয়েছে। হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়ার আগে মোবাইলের ম্যাসেজ অবশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সাগরদারি গ্রামের সালাম ব্যাপারী বলেন, ‘আমি গরুর ব্যবসা করি। ব্যবসার সব টাকা জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখায় রেখেছিলাম। গত বুধবার দুপুরে ব্যাংকে টাকা তুলতে গেলে দেখি আমার হিসাব থেকে ৪১ লাখ টাকা নেই।’
এ ছাড়া খালইভড়া গ্রামের শাপলা খাতুনের ১৬ লাখ টাকার জমা রশিদ দিলেও ওই টাকা হিসাব নম্বরে জমা হয়নি। ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুনসুর আলম পিন্চুর হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উধাও হয়ে গেছে। বনগ্রামের আব্দুল মতিনের ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রাজাপুর গ্রামের হযরত আলীর ১ লাখ ৫০ হাজার, বহল বাড়ীয়ার আবু জাফরের ৫ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন গ্রাহকের টাকা আত্মসাত হয়েছে বলে জানান তারা।
বনগ্রাম জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রাহকদের থেকে অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জনতা ব্যাংক পাবনা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মুঞ্জুরুল ইসলাম জানান, বিভাগীয় কর্মকর্তারা ও ঢাকা হেড অফিসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে আসল ঘটনা জানা যাবে। অভিযুক্ত ম্যানেজার বর্তমানে জেলহাজতে আছেন।