সত্য সমাচার ডিজিটাল:
হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.)–এর ঘনিষ্ঠতম সাহাবী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং ইসলামের প্রথম খলিফা। তিনি কুরাইশের বনু তাইম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম ছিল আব্দুল কা'বা, যা নবীজী পরিবর্তন করে আব্দুল্লাহ রাখেন। উট পালনের শখের কারণে তিনি ‘আবু বকর’ উপাধি পান এবং নবীজী তাঁকে ‘সিদ্দীক’—অর্থাৎ সত্যের সাক্ষ্যদাতা—উপাধিতে ভূষিত করেন।
ইসলাম গ্রহণের আগেই তিনি ছিলেন মক্কার সম্মানিত, সৎ ও দয়ালু মানুষ। ধনী ব্যবসায়ী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর জীবন ছিল অত্যন্ত সাধারণ। তিনি দরিদ্র, দাস ও নিপীড়িত মানুষদের সাহায্যে নিজের সম্পদ ব্যয় করতেন। নবীজীর দাওয়াত পাওয়ার পর তিনি দ্বিধাহীনভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করেন।
নবীজীর প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল অসাধারণ। হিজরতের কঠিন যাত্রায় তিনি নবীজীর সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। যুদ্ধগুলোতে তিনি সর্বদা নবীজীর পাশে দাঁড়ান। একবার মদিনার প্রতিরক্ষার জন্য অর্থ সংগ্রহের সময় তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ নবীজীর হাতে তুলে দেন—নিজের পরিবারের জন্য রাখেন কেবল “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল”।
নবীজীর ইন্তেকালের পর মুসলিম সমাজ শোকে ভেঙে পড়লে তিনিই সবাইকে স্থিরতা ফিরিয়ে দেন। তাঁর বিখ্যাত ঘোষণা—“যারা মুহাম্মদকে উপাসনা করত, জেনে রাখো মুহাম্মদ মারা গেছেন। আর যারা আল্লাহকে উপাসনা করে, আল্লাহ চিরঞ্জীব”—মুসলমানদের মনোবল ফিরিয়ে আনে।
খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি একের পর এক কঠিন সংকটের মুখোমুখি হন। বহু গোত্র বিদ্রোহ করে এবং যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ভণ্ড নবীদের আবির্ভাব এবং রোমান–পারস্য সাম্রাজ্যের হুমকি নবীন ইসলামী রাষ্ট্রকে অস্থির করে তোলে। অনেক সাহাবী সাময়িক আপসের পরামর্শ দিলেও তিনি বলেছিলেন—সালাত ও যাকাত আলাদা করা যাবে না। আল্লাহর কোনো আদেশে ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর দৃঢ় অবস্থানই শেষ পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রকে পুনরায় স্থিতিশীল করে।
বিদ্রোহীদের দমন, ভণ্ড নবীদের পরাজিত করা এবং মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর তিনি নবীজীর নির্দেশ মতো উসামা (রা.)–এর সেনাদলকে যুদ্ধে পাঠান। যুদ্ধনীতিতে মানবিক আচরণের যে নির্দেশাবলী তিনি দেন—নারী, শিশু, বৃদ্ধকে না মারা, গাছ না কাটা, সন্ন্যাসীদের বিরক্ত না করা—তা আজও ইতিহাসে মানবিক আদর্শ হিসেবে স্মরণীয়।
তাঁর নেতৃত্বে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) অসাধারণ সামরিক সাফল্য লাভ করেন। ইসলামের জন্য আবু বকরের সবচেয়ে বড় অবদানের একটি হলো কুরআনের আয়াতসমূহ সংকলনের উদ্যোগ। তিনি ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন এবং নবীজীর পাশেই দাফন করা হয়। প্রায় দেড় বছরের মতো অল্প সময়ের খিলাফতে তিনি আল্লাহর রহমতে ইসলামী রাষ্ট্রকে সুসংগঠিত করেন এবং মুসলিম উম্মাহকে সবচেয়ে কঠিন সময় থেকে নিরাপদে নিয়ে আসেন।
হযরত আবু বকর (রা.) ইসলামের ইতিহাসে চিরস্থায়ী এক আদর্শ—সত্যনিষ্ঠা, ত্যাগ, দৃঢ়তা এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসার প্রতীক।
সম্পাদক:মো: আবু ফাত্তাহ
বেঙ্গল সেন্টার (৬ষ্ঠ তলা) ২৮ তোফখানা রোড ঢাকা-১০০০।
ফোন:০১৬১৮৫১১৫১৭ মেইল: sattyasamacher@gmail.com
Copyright © 2025 sattyasamacher.com. All rights reserved.