সত্য সমাচার ডেক্স :
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে প্রথম প্রান্তিক থেকেই মনোযোগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের পাশে চায় সরকার। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এডিপির অর্থ ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়নের হার নিয়ে খোদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস অসন্তুষ্ট। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে গতি বাড়াতে কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে এডিপি বাস্তবায়নের হার না বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করছে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশন।
সরকারি কোনো প্রকল্পের কাজে কাক্সিক্ষত গতি নেই। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণেও গতি ফেরেনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় অর্থবছরের শুরুতেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শুরুতেই উল্লেখযোগ্য ঘাটতি তৈরি হওয়ায় বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এ জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারস্থ হচ্ছে সরকার।
অর্থনীতিবিদদের মতে, চলতি অর্থবছরের শুরুতেই এ ধরনের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় আগামী মাসগুলোতে রাজস্ব সংগ্রহের চাপ বাড়াবে। বাজেট বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে কেবল ভ্যাট বা করপোরেট ট্যাক্সের ওপর নির্ভর না করে রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রগুলোতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। বিশেষ করে শুল্ক খাতে প্রশাসনিক সংস্কার এবং আয়কর
আহরণে স্বচ্ছতা ও করদাতাদের আস্থা বাড়ানো জরুরি। অন্যথায়, উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় সংকোচন, সরকারি ঋণ বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতায় চাপ তৈরি হতে পারে। ফলে রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করা এখন সরকারের অন্যতম বড় অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটানো ও সংস্কার উদ্যোগে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে। মূলত ব্যাংকিং খাতের সংকটাপন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘিরে সংস্কারের প্রেক্ষাপটে এ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ঋণদাতার পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক আশ্বাসও পাওয়া গেছে বলে ইআরডি সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, এআইআইবি ছাড়াও বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে চলতি অর্থবছরে আরও ১ দশমকি ৮৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা আসবে। বাজেট সহায়তা মূলত বাজেট ঘাটতি মেটাতে ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জোরদারে নেওয়া হয়। তবে চলতি অর্থবছরে কি পরিমাণ বাজেট সহায়তার প্রয়োজন হবে, তা অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে চূড়ান্তভাবে জানা যাবে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের রাজস্ব খাতে খরচ কমাতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। তা না হলে বাজেট বাস্তবায়নে সহায়তার প্রয়োজন হবে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিলে সুদের হার কম থাকে। এ ছাড়া বাজেট সহায়তার মূল উদ্দেশ্য হলো সংস্কার কর্মসূচিকে সহায়তা করা।
ইআরডি সূত্র জানায়, বর্তমানে এডিবির সঙ্গে তিনটি বাজেট সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে, যার আওতায় অন্তত ৮৫০ মিলিয়ন ডলার ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ অর্থ ব্যয় হবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সহনশীলতা জোরদারে।
এ ছাড়া এডিবির বাজেট সহায়তা পাইপলাইনে ব্যাংকিং খাত সংস্কার সাব-প্রোগ্রাম-২ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেখান থেকে ২০২৭ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত অর্থবছরে সরকার এডিবি থেকে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছিল।