সত্য সমাচার ডেক্স :

২৪ নভেম্বর ২০২৫,

পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটিও নেই- কথাটি লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ। আসলেই তাই, বাবা কখনই খারাপ হতে পারেন না। কেননা বাবা এমন একজন ব্যক্তি, যিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে তার সন্তানকে আগলে রাখেন, ছায়ার মতো পাশে থাকেন, নির্ভরতা দেন। বাবাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে অনেক নাটক। তার মধ্যে কয়েকটি নিয়ে আজকের আয়োজন।

‘বাবাও মানুষ’

সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত নাটক এটি। দর্শক হৃদয়ে গভীর দাগ কেটে যাচ্ছে ইকসান রনির আবেগঘন নির্মাণে তৈরি এ নাটক। বাবাদের সারাজীবনের ত্যাগ, চিন্তা, পরিশ্রম ও না-বলা যন্ত্রণার গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই নাটকে। নাটকে দেখানো হয়েছে, যে বাবা একসময় পরিবারকে আগলে রাখেন, বয়সের ভারে সেই মানুষটিই অনেক সময় পরিবারের কাছে ‘বোঝা’ হয়ে ওঠেন। সন্তানরা তখন আর দেখতে চায় না বাবার ক্লান্ত কাঁধ, নীরব ত্যাগ কিংবা দীর্ঘশ্বাসের গল্প। নাটকটির মূল বার্তা- বাবারা অভিযোগ করেন না, তাই তাদের কষ্টটাও অনেক সময় অদৃশ্য থেকে যায়। নাটকে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু, তানিয়া বৃষ্টি, জুনায়েদ বোগদাদি, শিরিন আলম, শেখ স্বপ্না, ফাইজুল কবির রথি, নাহার নওরিন, রকি খান, আরসি অরণ্য, কাকন চৌধূরী, আবু রায়হানসহ আরও অনেকে।

‘চোর’

সন্তানের জন্য দুধ কেনার টাকা নেই। তাই সুপারশপে ঢুকে দুধ চুরি করেন বাবা। ধরাও পড়েন পাহারাদারের হাতে। তেমন গল্প নিয়ে নাটক ‘চোর’। ঘর থেকে বের হয়ে নিচের দোকানে যান দুধের জন্য। কিন্তু দোকানি আগের পাওনা পরিশোধ না করলে নতুন করে বাকি দিতে অস্বীকার করে। অতঃপর নাসির একটি সুপার শপে ঢোকেন। দুধ চুরি করে বের হওয়ার সময় সিকিউরিটির হাতে ধরা পড়েন। তারপর ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয় পুলিশ। এমন গল্পে নাসির চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনোজ প্রামাণিক। তার স্ত্রী হয়েছেন নাজিয়া হক অর্ষা। তাদের মেয়ে সাদিয়ার চরিত্রে দেখা যাবে আরিয়া অদৃতাকে। আরও আছেন বাশার বাপ্পি, মজুমদার নাহিদ, সাদেক সাব্বির, শোভরাজ চৌধুরী প্রমুখ। ‘চোর’-এ গল্প ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন জোনায়েদ রশিদ। পরিচালনা করেছেন মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু।

‘বাবার ছায়া’

কাব্য হাসানের রচনায় ‘বাবার ছায়া’ পরিচালনা করেছেন হাসান রেজাউল। এতে বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান; মা ও মেয়ে হয়েছেন মনিরা আক্তার মিঠু ও আইশা খান। ‘বাবার ছায়া’ নাটকের গল্পে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রী, সন্তান ও সংসার টেনে নিতে বয়স হয়ে গেলেও নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে যাচ্ছেন। কীভাবে তার পরিবারের সদস্যরা ভালো থাকবে, এ নিয়েই বেশি চিন্তা তার। এ কাজ করতে গিয়ে একদিন বিপদের মুখে পড়েন তিনি। নাটকটি নিয়ে রেজাউল বলেন, ‘সবার জীবনে মা হলো অনন্য। বাবার পরিশ্রমকেও কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। বাবা যেমন বিশ্বস্ততার হাত, বটবৃক্ষ, শ্রদ্ধার ব্যক্তিত্ব, শত কষ্ট হলেও তারা নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে চান না, এই নাটকের মাধ্যমে বাবাদের সেই ত্যাগের কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

‘শেষ বিকেলের গল্প’

২০ বছর পর লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরে খালার বাসায় ওঠে রেনুকা। খালার মাধ্যমে হঠাৎ সে জানতে পারে, তার বাবা বেঁচে আছেন! কিন্তু ছোটবেলা থেকেই রেনুকা জেনেছে, তার বাবা বেঁচে নেই, যে কারণে তার মা আরেক বিয়ে করেছেন। রেনুকা আরও জানতে পারে, তার বাবা একসময়ের খ্যাতিমান লেখক ছিলেন। হারিয়ে যাওয়া বাবার সন্ধানে নামে রেনুকা। এমন গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে নাটক ‘শেষ বিকেলের গল্প’। এটি পরিচালনা করেছেন জুবায়ের ইবনে বকর। এতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান আর মেয়ের ভূমিকায় জাকিয়া বারি মম।

বাবা হতে পারছি, এটা বিরাট ব্যাপার -আবুল হায়াত

অভিনেতা আবুল হায়াতকে দেখলেই একজন বাবার ভাবমূর্তি ভেসে ওঠে। নাটকে বাবা চরিত্রে তাকেই সবথেকে বেশি দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘বাবা হতে পারছি, এটা বিরাট ব্যাপার। একদম তরুণ বয়স থেকেই বাবার চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি যাদের বাবা হতাম, তাদের অনেকেই বয়সে আমার বড়। তাদের মধ্যে ফেরদৌসী মজুমদার, বুলবুল আহমেদ, সৈয়দ আহসান আলী সিডনি, গোলাম মুস্তাফা, সিরাজুল ইসলাম, মমতাজউদ্দীন স্যারসহ অনেকেই আছেন। এখনকার প্রজন্ম তো আছেই। বাস্তবের বাবার দায়িত্ব অনেক বেশি। বাস্তবের বাবা তার স্ত্রী, পরিবার ও সন্তানের প্রতি অনেক দায়িত্বশীল। নাটকের বাবার যে দায়িত্ব নেই, সে কথা বলব না। নতুন প্রজন্মের যারা এখন আমার সন্তানের চরিত্রে অভিনয় করছে, তাদের প্রতি আমার এক ধরনের স্নেহ-ভালোবাসা আছে।’

বাবা চরিত্রের গুরুত্ব না থাকলে আমি অভিনয় করি না -মাসুম বাশার

পর্দায় বাবা চরিত্রে অনবদ্য মাসুম বাশার। অসংখ্য নাটকের গল্পে বাবা হয়েছেন এই অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘বাবা হওয়াটা সৌভাগ্যের। বাস্তব জীবনে দুই মেয়ের বাবা আমি। ওদের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। শুধু বাবাই নই, ওদের ভালো বন্ধুও আমি। ওদের সব ভাবনাচিন্তা আমার সঙ্গে শেয়ার করে। আসলে বাস্তবের বাবার দায়িত্ব অনেক বেশি। সন্তানের প্রতি অনেক দায়িত্বশীল হতে হয়। আমার দুই মেয়েই প্রতিষ্ঠিত। কর্মজীবনে তাদের সফলতা, অর্জন নিয়ে আমি গর্বিত। আগে বিটিভির যুগে বাবা-মা চরিত্রের বেশ গুরুত্ব থাকলেও এখন বাজেটস্বল্পতার কারণে গুরুত্ব কমে গেছে। বর্তমানে খুব কম নাটকেই বাবা-মা গুরুত্ব পাচ্ছে। ইদানীং একটু মূল্যায়ন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তবে গল্পে বাবা চরিত্রের গুরুত্ব না থাকলে আমি অভিনয় করি না।