সত্য সমাচার ডেক্স :
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫,
বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম সম্পন্ন করার স্থান নয়। এটি গবেষণা, সংস্কৃতি চর্চা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশের অন্যতম কেন্দ্র। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৯টি বিভাগ এবং দুটি ইনস্টিটিউটে শিক্ষকের ঘাটতি শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত ক্লাসের চাপ বাড়ছে। এতে গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানসম্মত একাডেমিক সম্পর্ক গড়ে তোলা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানদ-ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকা আদর্শ হলেও জবির একাধিক বিভাগে এই অনুপাত উদ্বেগজনক। ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, নাট্যকলা, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, চারুকলা, আইন এবং ভূমি প্রশাসন বিভাগে শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কিছু বিভাগে পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক নেই, এমনকি একাধিক শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন।
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট : এই ইনস্টিটিউটে ৬ শিক্ষাবর্ষের ২৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৬ জন শিক্ষক। ইনস্টিটিউটের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক দেবাশিস বিশ্বাস জানান, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ : এই বিভাগে নথিভুক্ত শিক্ষক ৯ জন হলেও দুজন শিক্ষাছুটিতে আছেন । ৭টি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৪৫ জন।
নাট্যকলা বিভাগ : ১১ বছর পার হলেও এই বিভাগে কোনো পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক নেই। ২৪৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৭ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন।
ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ : ২৪৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৪ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে এই বিভাগ, যেখানে একজন শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন। বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ মো. নিসতার জাহান কবীর বলেন, মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঁচটি ব্যাচ পরিচালনা করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ : এ বিভাগে ৮ জন শিক্ষক থাকলেও ৪ জন শিক্ষাছুটিতে। ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন এই বিভাগে।
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ : এই বিভাগে ৮ জন শিক্ষকের মধ্যে দুজন শিক্ষাছুটিতে এবং কোনো পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক নেই। ৩৬০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস পরিচালনায় অতিথি শিক্ষকের মাধ্যমে সংকট মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট : এই ইনস্টিটিউটে ২৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন।
চারুকলা অনুষদ : নতুন চালু হওয়া চারুকলা অনুষদের তিনটি বিভাগেও শিক্ষক সংকট রয়েছে। থ্রিডি আর্ট বিভাগে তিনজন, প্রিন্টমেকিং বিভাগে চারজন (একজন শিক্ষাছুটিতে) এবং ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে তিনজন পূর্ণকালীন শিক্ষক রয়েছেন। খ-কালীন শিক্ষকদের দিয়ে কার্যক্রম চলছে। এসব ডিপার্টমেন্টের একাধিক শিক্ষক শিক্ষিকা মনে করেন, শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত ক্লাস ও সহশিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষকদের অতিরিক্ত চাপের কারণে গবেষণা ও মানসম্মত শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষাছুটির কারণে সাময়িক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি নিরসনে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।